ইলমের ফযিলতঃ
লেখকঃ আজিজুল হাকিম
ইলম অর্থঃ জ্ঞান। কুরআন, হাদীসের জ্ঞান অর্জন করাটাই হচ্ছে ইলমে দ্বীন বা দ্বীনের জ্ঞান।
ইলম অর্জনের আবশ্যকতাঃ
মহান আল্লাহ তাআলার হুকুমকে যথাযথভাবে আদায় করার জন্য ইলম অর্জন করা প্রয়োজন। যে ইবাদতই করি না কেন সে সম্পর্কে অবশ্যই জ্ঞান অর্জন করতে হবে নতুবা সেই ইবাদত বিফলে যাবে।
ইলম সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَقُلْ رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا ﴾ (طه: ١١٤)
অর্থাৎ বল, হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর। (ত্বা-হা ১১৪ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ﴾ (الزمر: ٩)
অর্থাৎ বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? (যুমার ৯ আয়াত)
আল্লাহ আরও বলেন,
﴿يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ﴾ (المجادلة: ١١)
অর্থাৎ যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন। (মুজাদালা ১১ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,﴿
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ﴾ (فاطر: ٢٨)
অর্থাৎ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। (ফাত্বের ২৮ আয়াত)
ইলম অর্জন করা প্রত্যেকের জন্য ফরযঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘ইলম বা জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয।
ইবনু মাজাহ্ ২২৪, সহীহুল জামি‘ ৩৯১৩, বায়হাক্বী ১৫৪৪।
আল্লাহ তাআলা যার কল্যান চান তাকে ইলম দান করেনঃ
মুআবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনী জ্ঞান দান করেন।”
সহীহুল বুখারী ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০, মুসলিম ১০৩৭, ইবনু মাজাহ ২২১, আহমাদ ১৬৩৯২, ১৬৪০৭, ১৬৪১৮, ১৬৪৩২, ১৬৪৪৬, ১৬৪৪৫১, ১৬৪৬০, ১৬৪৭৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৬৭, দারেমী ২২৪, ২২৬
ইলমের ফযিলতঃ
★ সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খায়বার যুদ্ধের সময়) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে সম্বোধন করে বললেন, “আল্লাহর শপথ! তোমার দ্বারা একটি মানুষকেও যদি আল্লাহ সৎপথ দেখান, তবে তা (আরবের মহামূল্যবান) লাল উঁটনী অপেক্ষা উত্তম হবে।”
সহীহুল বুখারী ২৯৪২, ৩০০৯, ৩৭০১, ৪২১০, মুসলিম ২৪০৬, আবূ দাউদ ৩৬৬১, আহমাদ ২২৩১৪
★ আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়।
সহীহুল বুখারী ১০৭, ইবনু মাজাহ ৩৬, আবূ দাউদ ৩৬৫১, আহমাদ ১৪১৬, ১৪৩১, দারেমী ২৩৩
★ আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে; যাতে সে বিদ্যা অর্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন।”
মুসলিম ২৬৯৯, ২৭০০, তিরমিযী ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫৪, আবূ দাউদ ১৪৫৫, ৪৯৪৬, ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪
★ আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহ্বান জানাবে, সে তার অনুসারীদের সমতুল্য নেকীর অধিকারী হবে; তাতে তাদের নেকীর কিছুই হ্রাস পাবে না।”
মুসলিম ২৬৭৪, তিরমিযী ২৬৭৪, আবূ দাউদ ৪৬০৯, আহমাদ ৮৯১৫, দারেমী ৫১৩
★ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে লোক জ্ঞানার্জন করার জন্য বের হয় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের মাঝে) আছে বলে গণ্য হয়।
সহীহ্ তারগীব অত্তারহীব (৮৮)
★ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির শ্রীবৃদ্ধি করুন, যে ব্যক্তি আমার নিকট থেকে (আমার কোন) হাদিস শুনে যথাযথরূপে হুবহু অপরকে পৌঁছে দেয়। কেননা, যাকে হাদিস বর্ণনা করা হয় এমনও হতে পারে যে, সে শ্রোতা অপেক্ষা অধিক উপলব্ধিকারী ও স্মৃতিধর।”
তিরমিযী ২৬৫৭, ২৬৫৮, দারেমী ৩৪২
আলেমের মর্যাদাঃ
আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আলেমের ফযীলত আবেদের উপর ঠিক সেই রূপ, যেরূপ আমার ফযীলত তোমাদের উপর।” তারপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, আসমান-জমিনের সকল বাসিন্দা এমনকি গর্তের মধ্যে পিঁপড়ে এবং (পানির মধ্যে) মাছ পর্যন্ত মানবমন্ডলীর শিক্ষাগুরুদের জন্য মঙ্গল কামনা ও নেক দো‘আ করে থাকে।”
তিরমিযী ২৬৮৫, দারেমী ২৮৯
আবূ দরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে, যাতে সে জ্ঞানার্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আর ফেরেশতাবর্গ তালেবে ইলমের জন্য তার কাজে প্রসন্ন হয়ে নিজেদের ডানাগুলি বিছিয়ে দেন। অবশ্যই আলেম ব্যক্তির জন্য আকাশ-পৃথিবীর সকল বাসিন্দা এমনকি পানির মাছ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। আবেদের উপর আলেমের ফযীলত ঠিক তেমনি, যেমন সমগ্র নক্ষত্রপুঞ্জের উপর পূর্ণিমার চাঁদের ফযীলত। উলামা সম্প্রদায় পরগম্বরদের উত্তরাধিকারী। আর এ কথা সুনিশ্চিত যে, পয়গম্বরগণ কোন রৌপ্য বা স্বর্ণ মুদ্রার কাউকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাননি; বরং তাঁরা ইলমের (দ্বীনী জ্ঞানভাণ্ডারের) উত্তরাধিকারী বানিয়ে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা অর্জন করল, সে পূর্ণ অংশ লাভ করল।”
আবূ দাউদ ৩৬৪১, দারেমী ৩৪২
ইলম গোপন করার পরিনতিঃ
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।”
তিরমিযী ২৬৪৯, ইবনু মাজাহ ২৬৬, আহমাদ ৭৫১৭, ৭৮৮৩, ৭৯৮৮, ৮৩২৮, ৮৪২৪, ১০০৪৮
দুনিয়াবী স্বার্থে ইলম অর্জনের পরিনতিঃ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন জ্ঞান অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহ আয্যা অজাল্লার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না।”
আবূ দাউদ ৩৬৬৪, ইবনু মাজাহ ২৫২, আহমাদ ৮২৫২
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইলম অর্জন করা এবং আমল করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
No comments:
Post a Comment